
শেরপুর জেলা সমিতি ঢাকার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি চাকরি করেও ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’ নামে একটি বিদ্যুৎ সরঞ্জাম সরবরাহের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন। অভিযোগ আছে, তাকে ম্যানেজ না করে কোনো শিল্প উদ্যোক্তা কিংবা বহুতল ভবন নির্মাণকারী সংস্থা ‘সাব-স্টেশন’ স্থাপনের অনুমোদনই পান না। ব্যবসায়ীদের জিম্মি করেই তিনি তার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডিপিডিসির প্রকল্প পরিচালকের এই কুকীর্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আবু জাফর নামে সাবেক এক প্রকৌশলী তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগনামা জমা দেন। অভিযোগে বলা হয়, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে প্রকৌশলী রাজ্জাক তার ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন। ওসাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রাজ্জাকের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ব্যবহার হচ্ছে। ওসাকার মাধ্যমে বিগত কয়েক বছরে ট্রান্সফরমার, কেবলস, সার্কিট ব্রেকারসহ বিদ্যুতের নানা সরঞ্জাম বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই রাজ্জাক। রাজধানীর ১৫২/২/এম নম্বর পান্থপথের (তৃতীয়তলা) ওসাকা পাওয়ার লিমিটেডের করপোরেট অফিসটি পরিচালিত হচ্ছে।
অভিযোগনামায় আরো বলা হয়, প্রকৌশলী রাজ্জাক ডিপিডিসির প্রকল্প পরিচালক হওয়ার আগে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জে থাকার সময়েই তার ওসাকা পাওয়ার ফুলে-ফেঁপে ওঠে। কারণ সিদ্ধিরগঞ্জ এখন একটি উঠতি শিল্পাঞ্চল। গত কয়েক বছরে এ এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ওসাকা পাওয়ারের মাধ্যমেই বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করাতে বাধ্য হয়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। আবদুর রাজ্জাক সিদ্ধিরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী হওয়ার আগে মগবাজার এনওসিএসের সাব-অ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। কিন্তু ডিপিডিসির বদৌলতে তিনি দুই ধাপ টপকে সরাসরি সিদ্ধিরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান।
দুদকে জমা পড়া সেই অভিযোগনামা থেকে জানা যায়, প্রকৌশলী রাজ্জাক তার ওসাকা পাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন স্থাপন ও ট্রান্সফরমার বিক্রি করে প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা করছেন, যা একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি তা করতে পারেন না। প্রকল্প পরিচালক হওয়ায় সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে তার প্রতিষ্ঠানের ট্রান্সফরমারও তিনি সরবরাহ করছেন। গত বছরের জুনে সরকারি একটি প্রকল্পে তার ওসাকা পাওয়ারের মাধ্যমে ৩০০টি ট্রান্সফরমার সরবরাহ করেন। সেই ট্রান্সফরমারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, ওসাকার সরবরাহ করা ট্রান্সফরমারের মধ্যে ১৯১টি অত্যন্ত নিম্নমানের। এ কারণে তার বিল আটকে দেন ডিপিডিসির আরেক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। সেই বিল তুলতে এখন সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
অন্যদিকে প্রকৌশলী রাজ্জাক নিজ জন্মস্থান শেরপুরে ‘সিসকো ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সম্প্রতি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (আইইবি) নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করেও সেই নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি রাজ্জাক। গত ১ মার্চ এসব বিষয়ে জানতে প্রকৌশলী রাজ্জাককে ফোন করলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন সংযোগ কেটে দেন। এরপর ফোনে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।