
দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক সাবেক এমপি আতিক।
বিশেষ প্রতিনিধি:
শেরপুর সদর ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাননীয় হুইপ আতিউর রহমান আতিকের নামে-বেনামে ক্ষমতার অপব্যবহার, নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ করেছে।
বিভিন্ন এলাকায় কেনা জমি : শেরপুর সদর মৌজায় দুই দাগে ৩৫ দশমিক ১৬ ও ২৪ শতাংশ; বারঘরিয়া মৌজায় ছয় দাগে ৩৫, ১০ দশমিক ৭৫, ১৩ দশমিক ৫০, ৩০, ১৩১ দশমিক ৭৫ ও ১০ শতাংশ; কবিরপুর আন্ধারিয়া মৌজায় দুই দাগে ২০ ও ১৫ শতাংশ; তারাকান্দি মৌজায় পাঁচ দাগে এক একর আধা শতাংশ, ১৬ দশমিক ৫০, আট, পাঁচ ও ১৩ শতাংশ; চকরামপুর মৌজায় দুই দাগে চার শতাংশ ও সাড়ে সাত শতাংশ। এ ছাড়া শেরপুরের তিনআনী বাজারে তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় প্রায় দশ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ রয়েছে। শেরপুর সদর উপজেলার দুরুঙ্গি বিলের ৬০ একর জমি গ্রাস করেছেন তিনি।
পাকা বাড়ি : শেরপুর সদরের মাধবপুর এলাকায় ২৪ শতাংশের একটি পুকুর কিনে তা ভরাট করে সাততলা আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন আতিউর রহমান। এর প্রতিটি ফ্লোর ১২ হাজার বর্গফুটের। বাড়িটির আনুমানিক মূল্য বিশ কোটি টাকা। এর পাশেই তার আরেকটি তিনতলা ভবন রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা।
ঢাকায় সম্পদ : ঢাকার লালমাটিয়ায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট রয়েছে তার। নিকুঞ্জ ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে প্রায় দশ কোটি টাকা মূল্যের প্লট।
দুর্নীতির যেসব অভিযোগ : ব্রহ্মপুত্র সেতুসংলগ্ন গরুর হাট ও কাঁচাবাজার থেকে খাস কালেকশনের নামে প্রতি বছর সরকারি রাজস্ব খাতের ৬০ লাখ টাকা নিয়ে নেন এমপি আতিক। জেলা খাদ্যগুদাম থেকে সরকারি চাল ক্রয় ও এসএমও নিয়োগের মাধ্যমে বছরে সমপরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। শেরপুর সদর ও শ্রীবর্দী উপজেলার খাদ্যগুদামে খাদ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপির নাম ভাঙিয়ে তার দুই ভাগ্নে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেন।
শেরপুর সদরের তারাকান্দি বাজারের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে নিচু জমি ক্রয় এবং তা ভরাট করে সমাজসেবা অফিসের কাছে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিক্রির প্রস্তাব করেছেন এমপি আতিক। জেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, যুব উন্নয়ন অফিস, মৎস্য ভবন, পিটিআই অফিস, প্রস্তাবিত বিআরটিএ ও পাসপোর্ট অফিস ভবনের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট জমির মালিকদের সঙ্গে নামমাত্র মূল্যে নিজের নামে বায়না করে পরে চড়া মূল্যে সরকারের কাছে বিক্রি করেন তিনি।
পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিজ নির্বাচনী এলাকার অনেকের কাছ থেকে জনপ্রতি ১২-১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। শেরপুর সদর উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময় টিআর, কাবিখার বরাদ্দ যথাযথ ব্যবহার না করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির ক্ষেত্রে সুপারিশ করে সংশ্নিষ্টদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছেন। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শেরপুর জেলার ৫২টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কাছ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।